অক্টোবর, ১৭, ২০২৫
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
দেশলাই
দেশলাই
  • কবিতা
  • কথাসাহিত্য
    • গল্পসরগম
    • উপন্যাস
    • অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক
  • গদ্যধারা
  • উড়ন্তডুবুরী
    • সাক্ষাৎকার
    • রিভিউ
  • এক্সিবিশন
  • শিল্প
    • নাটক
    • চলচ্চিত্র
  • ধারাবাহিক
  • বিশেষ সংখ্যা
  • ডিরেক্টরি
    • মেলা
    • নাটক দল
    • বাউল দল
    • সাংস্কৃতিক সংগঠন
    • পাঠাগার
    • থিয়েটার
    • স্মরণ
    • প্রত্নতত্ত্ব
    • সাহিত্য পুরস্কার
    • প্রকাশনা সংস্থা
  • কেনাকাটা
    • বই : গদ্য
    • বই : গল্প
    • বই : কবিতা
    • বই : উপন্যাস
    • বই : দেড়ফর্মা
    • বই : নাটক ও চলচ্চিত্র
    • বই : ছড়া
    • লিটলম্যাগ
টাইপ করা শুরু করুন এবং বন্ধ করতে "এন্টার" বা "ESC" টিপুন
  1. আপনি দেখছেন: হোম >> গল্প : নখদর্পণ ...

গল্প : নখদর্পণ

নীলাদ্রি নিয়োগী

আগস্ট, ১৫, ২০২৫
অলংকরন: সুমন দীপ

এক

 

হ্যালোজেনের আলো একটা বিভ্রম তৈরি করছে। আসছে যাচ্ছে যে মেয়েরা, তাদের কুৎসিত দেখাচ্ছে। আর পুরুষদের লাগছে খুব সেয়ানা। যেন সবাই আমার ভেতর পর্যন্ত পড়ে ফেলছে ওই আলোয়! প্রাণপণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলাম। যাদবপুর থানা থেকে ঢাকুরিয়া যাব। ব্রিজ থেকে নেমে বাঁ-দিকে ঢুকে লেকের কাছে যেতে হবে। গেট কি রাতে খোলা থাকে? খোলা থাকলে ভেতরে ঢুকে পড়তে হবে। ঘটনা ক্রমে আসিতেছে…

 

মাছগুলো জলের নিচে কবর পেতে শুয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ আবার চিৎ সাঁতার দিয়ে ঢেউয়ের লেন বদলে ফেলছে অকারণ! ওরা চলে গেলে ফের নতুন মাছ আসছে। তাদের আবার মিতালি হচ্ছে কচুরিপানা আর শ্যাওলাদের সঙ্গে। জলের উপর ঘাই দিয়ে ফিসফিস করে আমাকে বলে গেল, খবর আছে আজ রাতে…

 

দুদিন থেকেই বুঝতে পারছিলাম আমি খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছি! সব যেন টের পাচ্ছি অদ্ভুত ভাবে! দুনিয়াদারির কোনও রহস্যই আর অজানা নয়। মানুষ-পশু-গাছ-ফুল-পাখি, সবাইকে পড়তে পারছি নির্ভুলভাবে! তবে আমার সেই থেকেই যন্ত্রণা হচ্ছে। খুব যন্ত্রণা! কানের ভেতর গরম সিসা বা গলানো পিচ ঢেলে দিলে যেমন লাগতে পারে, ঠিক তেমনই লাগছে। চারপাশের চিৎকারে চিৎকারে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি যেন! অথচ নিজে মূক হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ!

 

লেকের বেঞ্চে একজন কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তার সামনে গিয়ে কথা বলতে চাইলাম। আমার মুখ থেকে গোঁ গোঁ আওয়াজ বের হল মাত্র। লোকটা কাঁথা থেকে মুখ বের করে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দেখল। তারপর সেও পাল্টা গোঁ গোঁ আওয়াজ করে উঠল। আমি দেখলাম দিব্যি কমিউনিকেট করতে পারছি। সেই কথোপকথন লিপিতে প্রকাশ করলে অনেকটা এইরকম শোনাতো–

 

– হচ্ছে না। কিচ্ছু হচ্ছে না

– এইতো হচ্ছে!

– আপনার কী ঘটনা?

– কোনও ঘটনা নেই। ঘুমই ভালো

– অভ্যাস হতে কতদিন লাগলো?

– একটা বেড়ালের জীবৎকাল

– সব বেড়াল একই রকম বাঁচে?

– ওসব ছাড়ো। তোমার ঘুম হয়?

– ঝিমাই। আর চিৎকারে চিৎকারে চমকে উঠি

– সয়ে যাবে। মাদুলিফাদুলি লাগবে না।

– ওই দ্বীপটায় যাব। তুমি যাবে?

– তুমি খুব প্রশ্ন করো

– তোমার প্রশ্ন নেই?

– থাকলেও করি না। না করলেই আসলে উত্তর পাওয়া যায়

 

 

মাছগুলো প্রথমে কলকল করে উঠেছিল। খানিক বাদে চিনতে পেরে সঙ্গ দেয়। ভোর হওয়ার আগেই বুঝে নিতে হবে সব কিছু। সেয়ানা মানুষেরা মর্নিং ওয়াকে এসে গেলেই স্বপ্নটা ভেঙে যেতে পারে। জলের কবরে পাশ ফিরে শুতে গেলেও দেখেছি ঢেউ ওঠে। কীভাবে যেন আটলান্টায় খবর পৌঁছে যায়! তাবৎ ফ্যান্টাসি তখন একটু একটু জল সইয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে থাকে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিয়ে প্রবন্ধ অথবা কবিতা, কিছুই লেখার জো থাকে না।

 

 

 

দুই

 

আমার বোন রাত্রিকে প্রথম পড়তে পারলাম। ও কোনও কথাই বলে না প্রায়। খাওয়া, পড়া, ঘুম আর একা থাকার হবি নিয়ে ক্লাস সেভেন। অবসর সময়ে একটা মোড়ায় বসে নিজের নখের দিকে চেয়ে থাকে। আমি মজা করে নাম দিয়েছিলাম নখদর্পণ। দেখলাম, ওর নখে এটা মৃত্যুবিন্দু আঁকা! আগে কখনো দেখিনি। হঠাৎ স্পষ্ট শুনলাম, ঠোঁট না নাড়িয়েই ও বলছে, "আগে দেখবি কীভাবে? আজই হয়েছে। সময় নেই বেশি। সব তোকে দিয়ে যাব চিন্তা নেই।" আমি বললাম, "কোথায় যাবি?" ও বলল, "সকাল হয়েছে। আর আটকাস না।"

 

 

তারপর দুম করে সময়টা স্থির হয়ে গেল। একটা অল্টারনেটিভ রিয়েলিটি চালু হয়ে গেল যেন। সময় স্থির, আমি স্থির; সর্বোপরি নিশ্চুপ। চারপাশেও সবকিছু স্থির, তবুও কোথাও কিছু একটা চলছে! চলছে না শুধু, রীতিমতো ছুটছে। প্রবল বেগে ছুটতে ছুটতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। সম্বিত ফিরতেই দেখলাম আমার ঠোঁটে তিনটা সিগারেট গোঁজা। সেগুলো থেকে কালো তিনটা ধোঁয়া বেরিয়ে একটা আমার মাথায়, একটা ফুসফুসে আর একটা হৃদয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে আমি পুরোটাই ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেলাম। বায়বীয় আমি-র মধ্যে শুধু নখটা স্পষ্ট। তারপর থেকেই আমায় সবাই অবাক হয়ে দেখছে!

 

 

 

তিন

 

এতদিন তো চাইতাম, আমাকে সবাই দেখুক। ভাইরাল হতে চেয়ে চিৎকারে চিৎকারে বাতাসে বুদ্বুদ ছড়িয়েছি অগুন্তি। গাছ যে কিছু বলে, পাথর, মাটি, পাখি, ফুলও যে কথা বলে, শুনিনি। শুনতে চাইনি র‌্যাদার। আজ একটা নুড়ি আমাকে চমৎকারভাবে সবটা বুঝিয়ে বলল–

 

– সবই স্থির। একটা কিছুর সাপেক্ষে

– এই যে আমি ছুটছি, এটা?

– এটাও স্থির‌। অকম্প্রভাবে স্থির হে

– বিশ্বাস হয় না

– হবে। তবে বিশ্বাসও স্থির

– তোমার ট্যাগলাইন তাহলে 'সব স্থির'?

– ছুটতে থাকো, বুঝবে।

– ধুর গাড়ল। পড়ে থাক চুপচাপ।

– বুঝবে, স্থির বুঝবে। সময় হলেই বুঝবে। বোঝার সময়টাও স্থির…

– ম্যাকবেথের ডাইনি নাকি তুই? ফোট এখান থেকে

 

 

লাথি ঝাড়লাম। পায়ের জায়গায় কিছুটা বাতাস ভেসে গেল নুড়ির ওপর দিয়ে। ওটা নড়ল না। কপাল কুঁচকে আমি সরে এলাম ওখান থেকে। কানের কাছে সেই থেকে ঘুরছে 'সব স্থির'…

 

 

মাছগুলো আমাকে একবার করে গিলছে আর ঘাই মারার মতো করে উগরে দিচ্ছে জলের ওপর। ঢেউয়ের লেন বদলাতে বদলাতে আমিও পৌঁছে যাচ্ছি দ্বীপটার দিকে। শুয়ে থাকা লোকটা শূন্য দৃষ্টিতে জলের দিকে চেয়ে আছে‌। হয়তো আমাকে দেখতে পাচ্ছে, হয়তো পাচ্ছে না। ঘরকুনো লোক হলে যা হয়, ইচ্ছে থাকলেও ঘুরে আসা যায় না আশপাশ! তবে দৃষ্টিটা শূন্য হলেও বোঝা যাচ্ছে ওটা পিছলে পিছলে যাচ্ছে জলের ওপর দিয়ে। ওর চোখেও কি প্রশ্ন আছে? তবে এটা ঠিক প্রশ্ন না, পরিপ্রশ্ন বলা যেতে পারে। উত্তরের চেয়েও বেশি কোনও ব্যাখ্যা খুঁজছে সে! আমি নিজেকে চট করে জলের রঙে সাজিয়ে নিলাম। এবার দেখ, কত দেখবি! বেড়ালের নটা জীবন থাকে, জানিস না?

 

 

 

চার

 

সবার উপর ভয়ানক রাগ হচ্ছে! উথালপাথাল রাগ! এমন রাগে গোটা দ্বীপটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে! জলের স্তম্ভ উঠে কলকাতাকে মেঘ করে দিতে পারে আচানক! এমন রাগে মরে না গিয়েও ফসিল হতে পারে সমস্ত গাছ! ওরা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো– 'নখদর্পণে মৃত্যু দেখো, মৃত্যু!' আমি নখের দিকে চেয়ে দেখলাম, স্পষ্ট হাসছে আমার বোন! এই প্রথম হাসতে দেখলাম ওকে! বলল, 'নখের আমিতেও নখ আছে জানিস? ওখানে তুই ধাপ্পা! চোর-পুলিশ খেলবি দা'ভাই?'

 

 

আর আমি দ্বীপটা কিনে নিলাম। আর সেই দ্বীপ, চারটা থেকে কমে তিনটা, তিনটা থেকে দুটো, দুটো থেকে একটা ডাইমেনশনে নেমে, শেষে শূন্য হয়ে গেল! আমি ফের মাছের কানকোয় ঘাই হয়ে, ঢেউয়ের লেন বদলে বদলে ফিরে এলাম কলকাতার ফুটপাতে। টিভির দোকানে তখন ধূপকাঠি জেলে সন্ধ্যাহ্নিক দিচ্ছে সেলসম্যান। প্রতিটা টিভিতে হাঁ-মুখ নীল তিমি! বাবার হাত ধরে দুটো বাচ্চা মন দিয়ে স্ক্রিন গিলছে!

 

 

মাথা নিচু করে না হেঁটে উপায় আছে?

মন্তব্য, এখানে...

নীলাদ্রি নিয়োগী

জন্ম জলপাইগুড়ি শহরে। কলেজ জীবন থেকে কলকাতাবাসী। সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা। প্রিয় লেখক জীবনানন্দ দাশ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও নবারুণ ভট্টাচার্য। প্রবন্ধ ও পুস্তক সমালোচনা লিখে থাকেন। লিখতে ভালোবাসেন গল্প এবং ব্যক্তিগত গদ্যও।

আরোও লেখা পড়ুন


গল্প : নখদর্পণ

নীলাদ্রি নিয়োগী
আগস্ট, ১৫, ২০২৫

অলংকরন: সুমন দীপ

এক

 

হ্যালোজেনের আলো একটা বিভ্রম তৈরি করছে। আসছে যাচ্ছে যে মেয়েরা, তাদের কুৎসিত দেখাচ্ছে। আর পুরুষদের লাগছে খুব সেয়ানা। যেন সবাই আমার ভেতর পর্যন্ত পড়ে ফেলছে ওই আলোয়! প্রাণপণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলাম। যাদবপুর থানা থেকে ঢাকুরিয়া যাব। ব্রিজ থেকে নেমে বাঁ-দিকে ঢুকে লেকের কাছে যেতে হবে। গেট কি রাতে খোলা থাকে? খোলা থাকলে ভেতরে ঢুকে পড়তে হবে। ঘটনা ক্রমে আসিতেছে…

 

মাছগুলো জলের নিচে কবর পেতে শুয়ে আছে। হঠাৎ হঠাৎ আবার চিৎ সাঁতার দিয়ে ঢেউয়ের লেন বদলে ফেলছে অকারণ! ওরা চলে গেলে ফের নতুন মাছ আসছে। তাদের আবার মিতালি হচ্ছে কচুরিপানা আর শ্যাওলাদের সঙ্গে। জলের উপর ঘাই দিয়ে ফিসফিস করে আমাকে বলে গেল, খবর আছে আজ রাতে…

 

দুদিন থেকেই বুঝতে পারছিলাম আমি খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছি! সব যেন টের পাচ্ছি অদ্ভুত ভাবে! দুনিয়াদারির কোনও রহস্যই আর অজানা নয়। মানুষ-পশু-গাছ-ফুল-পাখি, সবাইকে পড়তে পারছি নির্ভুলভাবে! তবে আমার সেই থেকেই যন্ত্রণা হচ্ছে। খুব যন্ত্রণা! কানের ভেতর গরম সিসা বা গলানো পিচ ঢেলে দিলে যেমন লাগতে পারে, ঠিক তেমনই লাগছে। চারপাশের চিৎকারে চিৎকারে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি যেন! অথচ নিজে মূক হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ!

 

লেকের বেঞ্চে একজন কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তার সামনে গিয়ে কথা বলতে চাইলাম। আমার মুখ থেকে গোঁ গোঁ আওয়াজ বের হল মাত্র। লোকটা কাঁথা থেকে মুখ বের করে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে দেখল। তারপর সেও পাল্টা গোঁ গোঁ আওয়াজ করে উঠল। আমি দেখলাম দিব্যি কমিউনিকেট করতে পারছি। সেই কথোপকথন লিপিতে প্রকাশ করলে অনেকটা এইরকম শোনাতো–

 

– হচ্ছে না। কিচ্ছু হচ্ছে না

– এইতো হচ্ছে!

– আপনার কী ঘটনা?

– কোনও ঘটনা নেই। ঘুমই ভালো

– অভ্যাস হতে কতদিন লাগলো?

– একটা বেড়ালের জীবৎকাল

– সব বেড়াল একই রকম বাঁচে?

– ওসব ছাড়ো। তোমার ঘুম হয়?

– ঝিমাই। আর চিৎকারে চিৎকারে চমকে উঠি

– সয়ে যাবে। মাদুলিফাদুলি লাগবে না।

– ওই দ্বীপটায় যাব। তুমি যাবে?

– তুমি খুব প্রশ্ন করো

– তোমার প্রশ্ন নেই?

– থাকলেও করি না। না করলেই আসলে উত্তর পাওয়া যায়

 

 

মাছগুলো প্রথমে কলকল করে উঠেছিল। খানিক বাদে চিনতে পেরে সঙ্গ দেয়। ভোর হওয়ার আগেই বুঝে নিতে হবে সব কিছু। সেয়ানা মানুষেরা মর্নিং ওয়াকে এসে গেলেই স্বপ্নটা ভেঙে যেতে পারে। জলের কবরে পাশ ফিরে শুতে গেলেও দেখেছি ঢেউ ওঠে। কীভাবে যেন আটলান্টায় খবর পৌঁছে যায়! তাবৎ ফ্যান্টাসি তখন একটু একটু জল সইয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে থাকে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নিয়ে প্রবন্ধ অথবা কবিতা, কিছুই লেখার জো থাকে না।

 

 

 

দুই

 

আমার বোন রাত্রিকে প্রথম পড়তে পারলাম। ও কোনও কথাই বলে না প্রায়। খাওয়া, পড়া, ঘুম আর একা থাকার হবি নিয়ে ক্লাস সেভেন। অবসর সময়ে একটা মোড়ায় বসে নিজের নখের দিকে চেয়ে থাকে। আমি মজা করে নাম দিয়েছিলাম নখদর্পণ। দেখলাম, ওর নখে এটা মৃত্যুবিন্দু আঁকা! আগে কখনো দেখিনি। হঠাৎ স্পষ্ট শুনলাম, ঠোঁট না নাড়িয়েই ও বলছে, "আগে দেখবি কীভাবে? আজই হয়েছে। সময় নেই বেশি। সব তোকে দিয়ে যাব চিন্তা নেই।" আমি বললাম, "কোথায় যাবি?" ও বলল, "সকাল হয়েছে। আর আটকাস না।"

 

 

তারপর দুম করে সময়টা স্থির হয়ে গেল। একটা অল্টারনেটিভ রিয়েলিটি চালু হয়ে গেল যেন। সময় স্থির, আমি স্থির; সর্বোপরি নিশ্চুপ। চারপাশেও সবকিছু স্থির, তবুও কোথাও কিছু একটা চলছে! চলছে না শুধু, রীতিমতো ছুটছে। প্রবল বেগে ছুটতে ছুটতে তছনছ হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। সম্বিত ফিরতেই দেখলাম আমার ঠোঁটে তিনটা সিগারেট গোঁজা। সেগুলো থেকে কালো তিনটা ধোঁয়া বেরিয়ে একটা আমার মাথায়, একটা ফুসফুসে আর একটা হৃদয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে আমি পুরোটাই ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেলাম। বায়বীয় আমি-র মধ্যে শুধু নখটা স্পষ্ট। তারপর থেকেই আমায় সবাই অবাক হয়ে দেখছে!

 

 

 

তিন

 

এতদিন তো চাইতাম, আমাকে সবাই দেখুক। ভাইরাল হতে চেয়ে চিৎকারে চিৎকারে বাতাসে বুদ্বুদ ছড়িয়েছি অগুন্তি। গাছ যে কিছু বলে, পাথর, মাটি, পাখি, ফুলও যে কথা বলে, শুনিনি। শুনতে চাইনি র‌্যাদার। আজ একটা নুড়ি আমাকে চমৎকারভাবে সবটা বুঝিয়ে বলল–

 

– সবই স্থির। একটা কিছুর সাপেক্ষে

– এই যে আমি ছুটছি, এটা?

– এটাও স্থির‌। অকম্প্রভাবে স্থির হে

– বিশ্বাস হয় না

– হবে। তবে বিশ্বাসও স্থির

– তোমার ট্যাগলাইন তাহলে 'সব স্থির'?

– ছুটতে থাকো, বুঝবে।

– ধুর গাড়ল। পড়ে থাক চুপচাপ।

– বুঝবে, স্থির বুঝবে। সময় হলেই বুঝবে। বোঝার সময়টাও স্থির…

– ম্যাকবেথের ডাইনি নাকি তুই? ফোট এখান থেকে

 

 

লাথি ঝাড়লাম। পায়ের জায়গায় কিছুটা বাতাস ভেসে গেল নুড়ির ওপর দিয়ে। ওটা নড়ল না। কপাল কুঁচকে আমি সরে এলাম ওখান থেকে। কানের কাছে সেই থেকে ঘুরছে 'সব স্থির'…

 

 

মাছগুলো আমাকে একবার করে গিলছে আর ঘাই মারার মতো করে উগরে দিচ্ছে জলের ওপর। ঢেউয়ের লেন বদলাতে বদলাতে আমিও পৌঁছে যাচ্ছি দ্বীপটার দিকে। শুয়ে থাকা লোকটা শূন্য দৃষ্টিতে জলের দিকে চেয়ে আছে‌। হয়তো আমাকে দেখতে পাচ্ছে, হয়তো পাচ্ছে না। ঘরকুনো লোক হলে যা হয়, ইচ্ছে থাকলেও ঘুরে আসা যায় না আশপাশ! তবে দৃষ্টিটা শূন্য হলেও বোঝা যাচ্ছে ওটা পিছলে পিছলে যাচ্ছে জলের ওপর দিয়ে। ওর চোখেও কি প্রশ্ন আছে? তবে এটা ঠিক প্রশ্ন না, পরিপ্রশ্ন বলা যেতে পারে। উত্তরের চেয়েও বেশি কোনও ব্যাখ্যা খুঁজছে সে! আমি নিজেকে চট করে জলের রঙে সাজিয়ে নিলাম। এবার দেখ, কত দেখবি! বেড়ালের নটা জীবন থাকে, জানিস না?

 

 

 

চার

 

সবার উপর ভয়ানক রাগ হচ্ছে! উথালপাথাল রাগ! এমন রাগে গোটা দ্বীপটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে! জলের স্তম্ভ উঠে কলকাতাকে মেঘ করে দিতে পারে আচানক! এমন রাগে মরে না গিয়েও ফসিল হতে পারে সমস্ত গাছ! ওরা একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো– 'নখদর্পণে মৃত্যু দেখো, মৃত্যু!' আমি নখের দিকে চেয়ে দেখলাম, স্পষ্ট হাসছে আমার বোন! এই প্রথম হাসতে দেখলাম ওকে! বলল, 'নখের আমিতেও নখ আছে জানিস? ওখানে তুই ধাপ্পা! চোর-পুলিশ খেলবি দা'ভাই?'

 

 

আর আমি দ্বীপটা কিনে নিলাম। আর সেই দ্বীপ, চারটা থেকে কমে তিনটা, তিনটা থেকে দুটো, দুটো থেকে একটা ডাইমেনশনে নেমে, শেষে শূন্য হয়ে গেল! আমি ফের মাছের কানকোয় ঘাই হয়ে, ঢেউয়ের লেন বদলে বদলে ফিরে এলাম কলকাতার ফুটপাতে। টিভির দোকানে তখন ধূপকাঠি জেলে সন্ধ্যাহ্নিক দিচ্ছে সেলসম্যান। প্রতিটা টিভিতে হাঁ-মুখ নীল তিমি! বাবার হাত ধরে দুটো বাচ্চা মন দিয়ে স্ক্রিন গিলছে!

 

 

মাথা নিচু করে না হেঁটে উপায় আছে?

মন্তব্য, এখানে...

নীলাদ্রি নিয়োগী

জন্ম জলপাইগুড়ি শহরে। কলেজ জীবন থেকে কলকাতাবাসী। সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা। প্রিয় লেখক জীবনানন্দ দাশ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও নবারুণ ভট্টাচার্য। প্রবন্ধ ও পুস্তক সমালোচনা লিখে থাকেন। লিখতে ভালোবাসেন গল্প এবং ব্যক্তিগত গদ্যও।

আরোও লেখা পড়ুন

কথাসাহিত্য

গল্প : কাউন্ট আপ ...: অপু শহীদ

অপু শহীদ জুলাই, ২৮, ২০২৩

এই গল্পের পুরোটা আমার জানা নাই।  শুরুটা জানা নাই। শেষটাও জানা নাই। তবে কিছুটা জানি। কিছুটা আপনারা জানেন। সবকিছু মিলিয়ে একটা কিছু কাউন্ট করা যেতে পারে। কাউন্টআপ করতে হবে। না হয় ভারসাম্য ন

কথাসাহিত্য

গল্প : কালের সংক্ষুব্ধ ঢেউ ...: নাঈম আহমেদ

নাঈম আহমেদ জুলাই, ২৮, ২০২৩

তখন রাতের দুই প্রহর। উদাম আসমান। ফকফকা চান্নি। চান্নি দেখা যায়। তবে চান দেখা যায় না। ঘাড় বাঁকাতে হয়। জলিবনমুখী কাঁচা রাস্তাটি ফসলী জমিন বেবচ্ছেদ করে কিছু দূর গিয়ে দুই দিকে দুই বাহু মেলে দি

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : বাঁজা ...: আখতার বানু শেফালি

আখতার বানু শেফালি মে, ১৩, ২০২৩

বারান্দার বেড়ায় হেলান দিয়ে মুখ শাড়ীর আঁচলে ঢেকে মাটিতে দুই পা ছড়িয়ে বসে সুর করে কাঁদছিলো ময়না। নতুন বউ নিয়ে ঘরে থেকে তার স্বামী একসময় খেঁকিয়ে উঠলো,চুপ কর মাগী আর কান্দিস না, তোর মতো বাঁজা মে

কথাসাহিত্য

অণুগল্পযাচাইয়ের কষ্টিপাথর ...: বিলাল হোসেন

বিলাল হোসেন মার্চ, ০২, ২০২৩

যখন একটি অণুগল্প পাঠ করি, তখন এমন এক উচ্চতায় নিবিষ্ট করি আমার মন আর মগজ; প্রকৃতপক্ষে অই রকম হয়েই যায়;—আমার ভেতরে একধরণের অপারশূন্যতার সৃষ্টি হয়; বলা ভাল: আমি আসলে জাগতিক ভর/ বলের মধ্যে থাক

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : মধ্যরাত্রির গল্প ...: সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী ফেব্রুয়ারী, ১৬, ২০২৩

প্রথম যেদিন করবীকে সমস্ত জামাকাপড় খুলে জি টি রোডের সুনসান রাস্তায় মাঝরাতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিল, ওর রাগ হয়নি, লজ্জাও না। এমন কতোবার ওকে ছেলের জন্য নিজের লজ্জা ছাড়তে হয়েছে! ওর খা

কথাসাহিত্য

অণুগল্প : সে ...: পাতা কুড়ানি

পাতা কুড়ানি ফেব্রুয়ারী, ১৬, ২০২৩

আমি তাকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারি না। উপযুক্ত শব্দই জোটেনা আমার। ভয় হয় পাছে আমার অনুপযুক্ত অপ্রাসঙ্গিক শব্দে তার গভীর অনুভূতি খেলো হয়ে পড়ে!কিন্তু তবুও অনেক সময় আমি ভীষণভাবে কর্তব্যত

logo

বিষয়সমূহ >
কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

সাম্প্রতিক পোস্ট >

স্মৃতির বন্দুক

স্মৃতির বন্দুক

দীপেন্দু

আগস্ট, ২২, ২০২৫

ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি

শাহরিয়ার সাজ্জাদ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

টুকরো কথার স্রোত

টুকরো কথার স্রোত

রাতুল হরিৎ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

সর্বাধিক পঠিত >

স্মৃতির বন্দুক

স্মৃতির বন্দুক

দীপেন্দু

আগস্ট, ২২, ২০২৫

ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি

শাহরিয়ার সাজ্জাদ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

টুকরো কথার স্রোত

টুকরো কথার স্রোত

রাতুল হরিৎ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

সর্বাধিক পঠিত >

স্মৃতির বন্দুক

স্মৃতির বন্দুক

দীপেন্দু

আগস্ট, ২২, ২০২৫

ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি

শাহরিয়ার সাজ্জাদ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

টুকরো কথার স্রোত

টুকরো কথার স্রোত

রাতুল হরিৎ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

সাম্প্রতিক পোস্ট >

স্মৃতির বন্দুক

স্মৃতির বন্দুক

দীপেন্দু

আগস্ট, ২২, ২০২৫

ফটোগ্রাফি

ফটোগ্রাফি

শাহরিয়ার সাজ্জাদ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

টুকরো কথার স্রোত

টুকরো কথার স্রোত

রাতুল হরিৎ

আগস্ট, ২২, ২০২৫

বিষয়সমূহ >

কবিতা গল্পসরগম উপন্যাস অণুগল্প ও অণুগল্প বিষয়ক গদ্যধারা সাক্ষাৎকার রিভিউ এক্সিবিশন নাটক চলচ্চিত্র ধারাবাহিক বিশেষ-সংখ্যা বই নাটক দল

logo

  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ
  • স্বত্ব© দেশলাই ২০২৩
  • কারিগরি সহযোগিতায় হুমায়ুন কবির
  • লেখা পাঠাতে
  • বিজ্ঞাপন
  • ডোনেশন
  • ইবুক
  • যোগাযোগ